পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের আর্থিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রদান করার উদ্দেশে কৃষক বন্ধু প্রকল্প চালু করা হয়
কৃষক বন্ধু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি জনপ্রিয় প্রকল্প। পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের আর্থিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালে “কৃষক বন্ধু প্রকল্প” (Krishak Bandhu Prakalpa) চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা কৃষিকাজ করার জন্যে বছরে দুই কিস্তিতে আর্থিক সহায়তা পান।
কৃষক বন্ধু প্রকল্প হলো পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি উদ্যোগ, যা রাজ্যের কৃষকদের আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষকদের চাষাবাদে সহায়তা করা এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
কৃষক বন্ধু প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে তাদের পশে দাঁড়ানোর জন্য চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে সেগুলি নিচে দেওয়া হলো :
কৃষকদের বছরে দুবার (খরিফ ও রবি মরসুমে) চাষের জন্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
আর্থিক সহায়তার টাকা সরাসরি কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়।
কৃষকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে পরিবারকে ₹ ২ লক্ষ টাকা বীমার আর্থিক সহায়তা করা হয়।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে ফসল নষ্ট হলে, নথিভুক্ত কৃষকরা ফসলের ক্ষতিপূরণ স্বরূপ আর্থিক পায়।
অনলাইন ও অফলাইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খুব সহজে এই প্রকল্পে আবেদন করা যায়।
একবার রেজিস্ট্রেশন করলে পরবর্তীতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা জমা পড়বে।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পে আবেদন করার জন্য আবেদনকারীকে কিছু যোগ্যতা পূরণ করতে হয়, সেগুলি নিচে দেওয়া হলো :
আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
আবেদনকারীর নামে নূন্যতম চাষ যোগ্য জমি থাকতে হবে।
কৃষিকাজে নিযুক্ত আছেন এমন ব্যাক্তি আবেদন করতে পারবে।
অবশ্যই জমির মালিক বা পাট্টাধারী বা বর্গা কৃষক হতে হবে।
আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছর থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের বৈধ পরিচয়পত্র (ভোটার আইডি / আধার কার্ড) থাকতে হবে।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পে আবেদন করে এই প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার জন্যে আপনার কাছে কিছু বিশেষ নথি থাকার প্রয়োজন হয়, সেগুলি নিচে দেওয়া হলো :
পরিচয় প্রমাণের জন্য ভোটার কার্ড প্রয়োজন।
পরিচয় ও ঠিকানা প্রমাণের জন্য আধার কার্ড প্রয়োজন।
জমির রেকর্ড / পাট্টা / খাজনা রসিদ জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য।
আর্থিক সহায়তার টাকা সরাসরি ব্যাঙ্কে পেতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বিবরণ প্রয়োজন।
আবেদনকারীর সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
যোগাযোগের ও আবেদনের সময় OTP দেওয়ার জন্য একটি সক্রিয় মোবাইল নম্বর প্রয়োজন।
মৃত্যুর সার্টিফিকেট ও সম্পর্কের প্রমাণ (যদি প্রযোজ্য হয়)।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পে অনলাইন ও অফলাইন দুই ভাবেই আবেদন করা যায়।
কৃষক বন্ধু রেজিস্ট্রেশন অনলাইন প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। নিচে ধাপে ধাপে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
প্রথমে, আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলের ব্রাউজার থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটি খুলুন Official site link
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর, "নতুন কৃষক নিবন্ধন" (New Farmer Registration) বা "আবেদন করুন" (Apply Online) এর মতো একটি অপশন দেখতে পাবেন। এই অপশনটিতে ক্লিক করুন।
একটি নতুন পেজ খুলবে যেখানে আপনাকে আপনার সক্রিয় মোবাইল নম্বর দিতে বলা হবে। মোবাইল নম্বর দেওয়ার পর একটি ক্যাপচা কোড পূরণ করতে হবে। এরপর "Generate OTP" বাটনে ক্লিক করুন। আপনার মোবাইলে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) আসবে।
আপনার মোবাইলে আসা OTP টি নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করান এবং "Verify" বাটনে ক্লিক করে মোবাইল নম্বরটি যাচাই করুন।
OTP যাচাই করার পর, কৃষক বন্ধু অ্যাপ্লিকেশন ফর্মটি আপনার স্ক্রিনে চলে আসবে। এই ফর্মে আপনাকে ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, ব্যাংক তথ্য এবং জমির তথ্য পূরণ করতে হবে।
ফর্ম পূরণের পর, আপনাকে উপরে উল্লিখিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। নিশ্চিত করুন যে ফাইলগুলি সঠিক ফরম্যাটে (যেমন PDF, JPEG) এবং নির্দিষ্ট আকারের মধ্যে রয়েছে।
সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করার পর, একবার ফর্মটি ভালোভাবে যাচাই করে "Submit" বাটনে ক্লিক করুন। আপনার আবেদন সফলভাবে জমা পড়লে একটি অ্যাপ্লিকেশন আইডি বা রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাবেন। এটি ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করে রাখুন।
বর্তমানে অনলাইন আবেদন পদ্ধতি বন্ধ রয়েছে, কিন্তু আপনি চাইলে অফলাইনে আবেদন করতে পারেন।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আবেদন আবেদন ফর্মটি সংগ্রহ করুন, যেকোনো জেরক্স এর দোকানে পাবেন বা অনলাইন থেকেও ডাউনলোড করতে পারেন, form download link
ফর্মটি আপনার সঠিক তথ্য দিয়ে ও নির্ভুল ভাবে পূরণ করুন।
আপনার ডকুমেন্ট অনুযায়ী নাম, ঠিকানা ও ব্যাঙ্ক একাউন্টের তথ্য প্রদান করুন।
আপনার নামে যে পরিমান জমি আছে তার সঠিক তথ্য প্রদান করুন।
আধার কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করার জন্যে অনুমতি দিন।
আপনার ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক একাউন্ট, জমির রেকর্ড / পর্চা / খাজনা রসিদ - এর জেরক্স ও পাসপোর্ট সাইজ ছবি প্রদান।
আবেদন ফর্মটি সঠিক ভাবে পূরণ করুন ও সমস্ত তথ্যের জেরক্স কপি সহ আপনার নিকটবর্তী কৃষি অফিস বা ব্লক অফিসে জমা করুন।
আবেদন ফর্ম জমা দিলে আপনাকে একটা রেফারেন্স নম্বর দেবে সেটা দিয়ে আপনি অনলাইনে আপনার আবেদন পত্রটির স্থিতি চেক করতে পারবেন।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পে আবেদন করার পরে, আবেদনটি অ্যাপ্রুভ হয়েছে কিনা এবং কিস্তির টাকা দেওয়ার সময় আপনার একাউন্টের সব কিছু ঠিক আছে কিনা সেটা জানার জন্য কৃষক বন্ধুর স্টেটাস চেক (Krishak Bandhu Status Check) করা অত্যন্ত জরুরি। অনলাইনে স্ট্যাটাস চেক করার জন্য নিচের ধাপ গুলি ফলো করুন :-
সাইটে গিয়ে "Select Option" থেকে (Voter card, Adhaar card, Bank A/c no, KBID, MOBILE no, Acknowledgement no) যেকোনো একটি বিকল্প বেছে নিন।
যে বিকল্প সিলেক্ট করবেন তার তথ্য পাশের ঘরে প্রদান করুন।
ক্যাপচা কোডটি সঠিক ভাবে পাশের ঘরে লিখুন।
সমস্ত কিছু করার পরে search অপসনটিতে ক্লিক করুন, সেখানে আপনার কৃষক বন্ধু সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য দেখতে পাবেন।
আপনি চাইলে হোয়াটস্যাপ এর মাধ্যমে ও কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সমস্ত তথ্য পেতে পারেন। হোয়াটস্যাপ এর মাধ্যমে তথ্য পেতে "9830383383" নম্বর এ hi লিখুন।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের একাউন্টে দুই কিস্তিতে সর্বনিম্ন ₹4000 থেকে সর্বোচ্চ ₹10000 টাকা দেওয়া হয়। যে কৃষকের জমির পরিমান কম, তাকে কমপক্ষে ₹2000 করে দুই কিস্তিতে ₹4000 টাকা এবং যার জমির পরিমান বেশি তাকে জমির পরিমান অনুযায়ী প্রতি কিস্তিতে সর্বোচ্চ ₹5000 করে বছরে ₹10000 টাকা প্রজন্ত দেওয়া হয়।
জমির পরিমান | প্রতি কিস্তি টাকার পরিমান | বছরে মোট টাকার পরিমান |
---|---|---|
02 ডেসিমল থেকে 40 ডেসিমল প্রজন্ত | ₹2000 | ₹4000 |
41 ডেসিমল থেকে 80 ডেসিমল প্রজন্ত | ₹3000 | ₹6000 |
81 ডেসিমল থেকে ৯৯ ডেসিমল প্রজন্ত | ₹4000 | ₹8000 |
100 ডেসিমল (1 একর) বা তার বেশি | ₹5000 | ₹10000 |
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের টাকা দুই কিস্তিতে কৃষকদের একাউন্টে পাঠানো হয়। প্রথম কিস্তি খরিফ মরসুমে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় কিস্তি রবি মরসুমে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে দেওয়া হয়।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় কোনো কৃষকের দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু হলে তার পরিবারকে দুই লক্ষ টাকার বীমার আর্থিক সহায়তা (Krishak Bandhu Death Benefit) দেওয়া হয়। কৃষক বন্ধু প্রকল্প চালু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের পশে দাঁড়ানো, কৃষকের মৃত্যুতে সহায়তা তার একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের কোনো সমস্যার সমাধান ও সহায়তার জন্যে নিচে দেওয়া হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন:
সবশেষে এটা বলা যায় যে, কৃষক বন্ধু প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ কৃষকদের জীবনের মান উন্নত করতে বিশেষ ভুমিকা পালন করছে। যেমন দুই কিস্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে কৃষিকাজে অনেক সাহায্য হচ্ছে, তেমনই কৃষকের মৃত্যু জনিত বীমার মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যত নিরাপদ করছে।
তাই যদি আপনি পশ্চিমবঙ্গের একজন কৃষক হন বা কৃষক পরিবারের সদস্য হন, তবে অবশ্যই কৃষক বন্ধু প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করুন এবং এর সুবিধা গ্রহণ করুন।